ব্রাহ্মণবাড়িয়া.প্রেস:-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় চলতি বছর ২২ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধনী-২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় দায়েরকৃত মামলার (মামলা নং-৫৩) বিষয়ে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রাণির অভিযোগ এনে ১লা জুলাই পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন বিনা দোষে ২মাস ১২ দিন জেল খেটে হাই কোর্ট থেকে জামিনে মুক্ত হওয়া উক্ত মামলার আসামী মাহবুবুল নূর (দিপু)। প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ সুপার কর্তৃক তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল কবির এ বিষয়টি তদন্তে সম্পূর্ণ গুরুত্বহীন ছিলেন। সর্বশেষ ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ দপ্তর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার বরাবরে এই বিষয়টি তদন্তের নির্দেশনা আসলে নড়েচড়ে বসেন সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।

চলতি মাসের ৪ঠা সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় সদর সার্কেল কার্যালয়ে যাদের উপস্থিত থাকতে নোটিশ জারী করা হয়, সেই নোটিশে দিপুর করা দরখাস্তে যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তাদের অনেকেরই নাম নেই।

মাহবুবুল নূর দিপু ব্রাহ্মনবাড়িয়া পৌরসভার পুনিয়াউট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। দিপু সাকিয়াত কম্পিউটার একাডেমীর স্বত্ত্বাধিকারী

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জানুয়ারী রাত আনুমানিক ১১টা ৪০মিনিটে এসআই ধর্মজিৎ সিংহ দিপুকে ভাড়াটিয়ার তালিকা থানায় জমা দেয়ার বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ এর সাথে কথা বলার জন্য তার বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায়। থানার দ্বিতীয় তলায় এসআই কক্ষে এসআই ধর্মজিৎ দিপুকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর কালিসীমা গ্রামের বাবুল মিয়ার মেয়ে জেসমিনকে খঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা ও এ বিষয়ে থানায় জিডি এন্ট্রি আছে বলে জানান। এই প্রশ্নের জবাবে দিপু বলেন, জেসমিন ও তার দুই ভাই দিপুর প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার শিখতো। জেসমিনের বাবা তার দূর সম্পর্কের ভাই হয়। জেসমিন কোথায় আছে তাহা দিপু জানেন না। কিন্তু এসআই ধর্মজিৎকে দিপু জেসমিনের বিষয়ে তার বাবা সবকিছু জানেন বলে আশ্বস্ত করেন। তারপর ২১ জানুয়ারী সকাল ৭টায় জেসমিনকে এসআই ধর্মজিৎ থানায় নিয়ে আসেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই জেসমিনের পরিবারের সবাইকে দিপু থানায় উপস্থিত থাকতে দেখে থানা হাজত থেকে দ্রুত ছাড়া পাওয়ার শতভাগ আশা করেন। কিন্তু এসআই ধর্মজিৎ তাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে উদ্দেশ্যমূলক মামলা সাজিয়ে দিপুকে জেলে পাঠান।

দিপু’র করা অভিযোগসূত্রে আরো জানা যায়, থানা হাজতে থাকার সময় দিপুর সাথে তার পরিবারের সদস্যদের কাউকেই দেখা করতে দেয়নি থানা কর্তৃপক্ষ। দিপুকে এসআই ধর্মজিৎ সিংহ, কনস্টেবল মান্নান, জেসমিনের চাচাতো ভাই সোহেল ও জেসমিনের স্বামী হুমায়ুন কবির এই ৪(চার) জন এর যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিরপরাধ দিপুকে ৭২ দিন জেল খাটিয়েছে।

গত ২১ জানুয়ারী জেসমিনের সাথে থানার ডিউটি অফিসারের রুমে দিপুর ভাই ও কয়েক সাংবাদিকের সাথে কথা হলে জেসমিন তাদের বলেন, থানায় যা কিছু ঘটতেছে তা একটি সাজানো নাটক। তাকে কেউ অপহরণ করেনাই। জেসমিন নিজ থেকেই বাড়ি থেকে বের হয়ে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করে। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তার স্যার (দিপু) তাকে অপহরণ করেনাই। স্যারের (দিপু) এই কথাগুলো জেসমিন থানা পুলিশে যাদের সাথেই কথা হয়েছে সবাইকে থানায় যতক্ষণ ছিলেন ততক্ষন বলেছেন। তার চাচাতো ভাই সোহেল এসআই ধর্মজিৎ ও কনস্টেবল মান্নান তার স্যার(দিপু) এর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করার জন্য জেসমিনকে হুমকি দিয়েছে। জেসমিন রাজী না হওয়ায় জেসমিনের ফুফু তাকে পুলিশের সামনেই মারধর করেছে। থানা কর্তৃপক্ষ জেসমিনের কোনো কথাই বিশ্বাস করেননি বলে অভিযোগে জানা গেছে।

দিপুর করা অভিযোগসূত্রে আরো জানা যায়, জেসমিনের কোনো কথাই থানা কর্তৃপক্ষ আমলে না নিয়ে দিপুর বিরুদ্ধে জেসমীনকে ভয়ভীতি দেখাইয়া দিপুকে অপহরণকারী সাজিয়ে জেসমিনকে খুন, নারী পাচারকারী দলের নিকট বিক্রি করিয়া দিতে পারে উল্লেখ করে এসআই ধর্মজিৎ সিংহ জেসমিনের ছোট ভাই এনায়েতউল্লাহকে বাদী করে থানায় মামলা দেন।

চিফ জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আদালত বরাবর (২২ জানুয়ারি) এএসআই ধর্মজিৎ লিখেন, ভিকটিম জেসমিনকে ২২ জানুয়ারী অনুমান ১১.৪৫ মিনিটে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু দিপুর করা অভিযোগে লেখা আছে জেসমিনকে ২১ জানুযারী সকাল ৭টায় উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এসআই ধর্মজিৎ। অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার বিগত ২০ জানুয়ারী ১১.৪০ হতে ২২জানুয়ারী অনুমান দুপুর দুইটা পর্যন্ত থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও জেসমিনের জবানবন্দি যাচাইপূর্বক উক্ত বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করেন পুলিশ হয়রাণির শিকার দিপু। আবার মামলার বাদী মো. এনায়েতউল্লাহ দিপুকে সম্পূর্ণ নাটকীয় মামলায় কেনো হয়রাণি করলো সেই বিষয়টির ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উক্ত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন দিপু।

উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার কর্তৃক তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল কবির প্রায় দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও এই বিষয়টিকে কোনো প্রকার গুরুত্ব দেননি। তার বিরুদ্ধেও দিপু সময় ক্ষেপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ করবেন বলে জানান দিপু।

অভিযোগের বিষয়টি অভিযোগকারী দিপু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মাননীয় আইনমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি সহ সরকারের বিভিন্ন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুলিপি পাঠান।

গত দুই মাসে এই অভিযোগের বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল কোনো প্রকার দায়িত্ব পালন না করলেও ডিআইজি চট্টগ্রাম রেঞ্জ দপ্তর থেকে বিষয়টি তদন্ত করার তাগিদ দিলে গত ২৮আগষ্ট সদর সার্কেল স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ জারী করেন দরখাস্তকারী মাহবুবুল নূর দিপু ও মামলার বাদী মো. এনায়েত উল্লাহ ও ভিকটিম জেসমিনের বরাবর। উক্ত নোটিশে ২য় পক্ষ হিসেবে যাদের সেপ্টেম্বর মাসের ৪তারিখ সকাল ১১টায় সদর সার্কেল কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হলো তাদের মধ্যে দরখাস্তকারীর অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তি এসআই ধর্মজিৎ সিংহ ও কনস্টেবল মান্নান সহ অপরাপর ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ না থাকার বিষয়টি তদন্তকে ভিন্নখাতে নেয়ার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন দরখাস্তকারী দিপু।

দিপু বলেন, যার বিরুদ্ধে আমার বেশীর ভাগ অভিযোগ, যার কারণে আমি নিরপরাধ হয়েও দুই মাস ১২ দিন বিনাদোষে জেল খাটলাম সেই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই ধর্মজিৎ সিংহের  জবানবন্দি কেনো রেকর্ড করা হবেনা এবং ৪ঠা সেপ্টেম্বর কেনো তাকে নোটিশ করে উপস্থিত খাকতে বলা হলোনা তা আমার বোধগম্য নয়।

এই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোহাম্মদ রেজাউল কবির বলেন, এসআই ধর্মজিৎ সিংহকেও উপস্থিত থাকার কথা বলা হবে।

উল্লেখ্য যে, বিজ্ঞ আদালতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ধর্মজিৎ সিংহ দিপুর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগটিকে তথ্যগত ভুল ছিল মর্মে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। এই মামলা থেকে বিবাদী মাহবুবুল নূর দিপুকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য প্রার্থণা করেন তিনি।

By khobor

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *