ব্রাহ্মণবাড়িয়া.প্রেসঃ মাসুম বিল্লাহ্- গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ আমার পিতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★
অনেকেই আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আব্বাাকে স্বরণ করে, ভালবেসে ফেইসুকে স্ট্যাটাস দিয়ে দোয়া চেয়েছে, অনেকে মসজিদ মাদ্রাসায় মিলাদ পড়িয়েছে। আমি সকলের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আধুনিক পৃথিবীর পরিকল্পতি সমাজ ব্যাবস্থায় আমরা এত অতি আধুনিক ও ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি যে আমাদের সুঃখ, দুঃখ, আনন্দ, আবাগে, ভালবাসা, অনুভূতিগুল প্রকাশও যেন ভিন্ন ভিন্ন “দিবস” নামে নির্দিষ্ট ঐ দিবসে প্রকাশ বা উপলব্দি করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পরেছি।
বাবা-মা আমাদের জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ অমূল্য সম্পদ। বাবা-মা বেচে থাকুক বা না থাকুক থাকুক তাদের প্রতি আমাদের আবেগ, অনুভূতি, শ্রদ্ধা, ভালবাসায় তারা আমাদের মাঝে বেচে থাকবে সারাজীবন।
আব্বাকে হারিয়ে গত এই একটি বছরে ৩৬৫ দিন উপলব্দি করেছি বাবাহীন একজন সন্তানের পথচলা কতটা যে কঠিন। যতদিন বেচে থাকব বাবার শূণ্যতা প্রতিটি পদে পদে আমাকে উপলব্দি করতে হবে।
তাই আব্বার প্রথম মৃত্যুদিবসে আব্বাকে উপলব্দি করে বিশেষ কোন স্ট্যাটা দেয়নি।
২৪ জানুয়ারি ২০১৭ ইং, দিনটি ছিল আমার ও আমার পরিবারের জন্য এক অভিশপ্ত দিন। যে দিনটিতে আমার পরিবারের একমাত্র প্রধান সেনাপতি আমাদের জীবন সংগ্রামের পথপ্রর্শক, আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়া, অাশা-ভরশা, সুখ-দুঃখ, আস্তা, প্রেরনা, শক্তি, সাহস এবং ভালবাসার একমাত্র শেষ আশ্রয়স্থল আমার পিতা হাজী মোঃ নিজাম উদ্দিন আমাদের এতিম করে পৃথীবি থেকে চিরতরে বিদায় নেন।
একজন সন্তানের জন্য বাবা যে কতটা মূল্যবান, আব্বা জীবিত থাকতে যা লক্ষভাগের একভাগও উপলব্দি আসেনি। সন্তান যত বড় জ্ঞানী,গুণী, ক্ষমতাবানই হোক না কেন বাবা-মায়ের দোয়া দোয়া ভালবাসা যে একজন সন্তানের জীবন চলারপথে কত বড় রহমত, আর্শীবাদ আব্বাকে হারানোর পর এই একটি বছরে হারে হারে টের পেয়েছি।
আমার ও আমার পরিবারের বিপদে-আপদে, রোগ-শোকে, দুশ্চিন্তা-কান্নায় স্বার্থহীনভাবে বুকে আগলে ধরে নিজের সর্বস্ব দিয়ে রক্ষাকবচ হয়ে ঢাল হয়ে রক্ষা করত আর গাছের ন্যায় ছায়া দিয়ে রাখত একমাত্র অাব্বা। বাবা শব্দটা যে কত গভীর যার ‘বাবার জীবদ্ধশায় এতটা উপলব্দি না হলেও বাবার মৃত্যুর তা হারে হারে উপলব্দি হচ্ছে।
জানিনা যতদিন বেচে থাকব, আমার আব্বার মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারব কিনা। আমার আশা-ভরশা, চাওয়া-পাওয়ার একমাত্র শেষ ভরসা ও আশ্রয়স্থল ছিল আমার আব্বা। আব্বা জীবিত থাকা অবস্থায় কখনো মনেই হয়নি যে, আমি বড় হয়েছি। জন্মেরপর থেকেই আমাকে নাবালক শিশু মাসুমকে যেভাবে আগলিয়ে রাখত, উনার শেষ নিঃশ্বাস অবদি ঠিক সেই ভাবেই আমাকে আগলিয়ে রেখেছিল। আমার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃন রাখতে সর্বদা মাথার উপরে ছাতা হয়ে উনি আমার পাশে থাকত। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে জীবনে অনেক বড় বড় ঝুঁকি ভয়-ডরহীন খুব সহজেই মোকাবেলা করতে সাহস পেয়েছি কারন কোন বিপদ গঠলে বা হুঁচট খেলে আব্বা তু আছেই।
আসলে এখনো মেনে নিতে পারছিনা যে আব্বা আর নেই, প্রায় যেন কানে বাজে আব্বার সেই বজ্র কন্ঠ, আব্বার সেই পুরুনু নাম্বার থেকে যখন আম্মা কল করে এখনো হঠাত হঠাত চমকিয়ে উঠি। এখনো একটু রাত করে বাড়ি ফিরলে দরজায় আস্তে আস্তে ঠুকা দেয় যেন আব্বা শুনতে না পায়।
♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣♣
আব্বাকে নিয়ে কিছু স্মৃতি, কিছু আবেগ-অনুভুতি, বেদনা, কিছু অনুশোচনা এবং বাবাবিহীন একজন সন্তানের জীবনের কঠিন কিছু বাস্তবতা !!!
<<<<>-<><>-<>-<>-<>-<>-<>-<>-<>-<>>>>
আব্বা ছিল প্রচন্ড রাগি সভাবের একজন মানুষ। তাই ছোটবেলা আব্বাকে কারনে অকারনে খুব বেশি ভয় পেতাম। প্রয়োজন ছাড়া আব্বার আশ-পাশে খুব কমই যেতাম। কোন অন্যায় বা ভুল করলে আব্বার সামনে যেতে খুব ভয় পেতাম আর যদি সামনে পরেই যেতাম খুব শাসন করত এমনকি কখনো কখনো মারতও। তখন মনে মনে আব্বার উপর কিছুটা রাগও হত। কতদিন যে মার খাওয়ার ভয়ে বাসায় না বলে অন্যত্র চলে গেছি তার কোন হিসেব নেই। কিন্তু কয়েকদিন যাওয়ার পর কোন উপায় না দেখে আবার শেয় আশ্রয়স্থল ঘরে ফিরে আসতাম অথবা আদর করে উনিই আবার বাড়ি নিয়ে আসত। বড় হওয়ার পর এমনকি সভাপতি হওয়ার পরও কোন অন্যায় করলে বা ভূল পথে বাড়াতে গেলে উনার প্রতি সেই ভয় টা কাজ করত। উনার সামনে পড়লে যেন নিজের অজান্তেই ভয়ে হাত পা কাপত।
এখন বুজতে পারি উনার সেই প্রচন্ড শাসনের ভয়ই যে ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ট আর্শিবাদ কারন তখন যদি উনার সেই কঠোর শাসনের ভয় কাজ না করত তাহলে হয়ত আজ আমি এই অবস্থানে না এসে হয়ে যেতাম সমাজের আট দশটা বখাটে ছেলের মতই।
ছোট বেলা আব্বার ব্যাপারে শুধু মাত্র একটাই ধারনা ছিল যে, উনি প্রচন্ড রাগী ও বদ মেজাজি একজন মানুষ কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর আব্বাকে যতই দেখতাম ততই অবাক হতাম, অবাক হতাম, এই রাগি মানুষটার ভেতরে লুকিয়ে থাকা হৃদয়ে ভালবাসার বিশালতা দেখে, অবাক হতাম, একজন বাবা সন্তানের জন্য কতটা সেক্রিফাইস করতে পারে, অবাক হতাম একজন মানুষ নিজ ও নিজ পরিবারের বাহিরেও ভাই-বোন, আত্বীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশিদের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল হতে পারে, তাদের বিপদে আপদে সব সময় নিজেকে বিলিয়ে দিত সর্বোচ্ছ উজার করে।
মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম সব বাবারাই এমন না আমার আব্বা একটু ব্যাতিক্রম? সত্যিই আব্বা একটু ব্যাতিক্রম ছিল। নিজের প্রয়োজনীয়তাকে অপূর্ণ রেখে আমাদের প্রয়োজনীয়তা, চাহিদা পূরণ করতে, আমাদের বড় করতে, মানুষ করতে নিজের চিন্তা-শক্তি সামর্থ্য সর্বস্ব ব্যায় করেছে। কিন্তু বড় হয়ে আমরা যখন আব্বার পাশে, পরিবারের পাশে থাকা কিংবা দায়িত্ব নেয়ার কথা তখন স্বার্থপর সন্তানের মত ব্যাস্ত হয়ে পরি নিজেকে নিয়ে।
মৃতুদিন পর্যন্ত নানান রুগে শারীরিক ও আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল হওয়া সত্বেও পরিবার সর্বকনিষ্ঠ ভাই বোনদের লেখা পড়া এমনকি আমারদের স্ত্রী সন্তাদের দেখ-বাল ভরণ পোষনসহ পারিবারিক সকল জুট ঝামেলা একাই সামলাত। আম্মা প্রায় সময় বিরক্ত হয়ে বলত আপনার বয়স হয়েছে ছেলেরা এখন পরিবারের দায়িত্ব নেক। আব্বা বলত তাদের মাত্র ক্যারিয়ার হয়েছে বিশেষকরে আমাকে নিয়ে বলত সে অল্প বয়সে বিশাল রাজনৈতি দায়িত্ব পেয়েছে, সে তার মত করেই ব্যাস্ত থাকুক। পারিবারিক ও রাজনৈতক দায়িত্ব এই বয়সে একসাথে সামলাতে পারবেনা।
কিন্তু আমরা কখনো আব্বার মত করে একটিবার ও ভাবিনি উনার বয়স হয়েছে উনাকে রিলেক্স থাকা দরাকার। স্বার্থপররের মত করে সবসময় নিজের কথাই চিন্তাই করে গেলাম আর উনি মৃত্যুঅবদি নিস্বার্থভাবে আমাদের স্বার্থ, সফলতার জন্যে নিজের সকল সুখ, আনন্দ বিষর্জন দিয়েই গেলেন।
এখনো মনে পরে ছোট বেলায় রমজান মাস আসলেই দিনগুনতে শুরু করতাম ঈদের আর কতদিন বাকি আছে । দিন যতই ঘনিয়েরআসত ততই ঈদের উত্তেজনা বাড়ত। ঈদ উপলক্ষ্যে কি কি কিনব, কোথায় কোথায় ঘুরতে যাব কতযে আনন্দ পরিকল্পনা ইত্যাদি। আমার মত পরিবারের সকল সদস্যদেরও এই সমস্ত ডিমান্ড, চাওয়া পাওয়া পূরণে যেন বাধ্য একটি ব্যাক্তি, যিনি মধ্যবিত্তত একটি পরিবারের কর্ণধার। ঐ সময় নিজের একটু কমতি হলেই সব অভিমান অভিযোগ/রাগ দেখাতাম ঐই ব্যাক্তিটির উপরে। একবারও চিন্তা আসতনা মধ্যবিত্ত পরিবারের সাদামাটা জীবনযাপন করা লোকটি কিভাবে আমাদের ডিমান্ড পুরণে করে যাচ্ছে। আর উনিই বা কেন ঈদের দিন সারাদিন বাসায় থাকত এবং সেই পুরণো জামা কাপর ঈদের নামাজ আদায় করত!!!!
এমন অসংখ্যবার হয়েছে রাজনৈতিক বিভিন্ন ঝুট ঝামেলায় বা বড় কোন কোন প্রোগরাম এরেন্জম্যান্ট করতে গিয়ে প্রায়ই সিদ্ধান্তহীনতায় কিংবা আর্থিক সংকটে পড়ে দিশাগ্রস্থ হয়ে চারিদিক অন্ধকার দেখতাম তখন একমাত্র অন্ধাকারের আলোর দিশারী হয়ে আব্বা এসে পাশে দাড়াঁত।
মনে আছে আমার সম্মেলনের সময় চারিদিকে দৌরঝাপ করতে গিয়ে সম্মেলনের দিন সভাপতি প্রার্থী হিসেবে আমার মিছিল সে ভাবে অরগ্যানাইজ করতে পারতেছিলাম না। তখন আব্বা বলছিল তুই অন্যদিকে সামলা আমি মিছিল অরগ্যানাইজ করতেছি। এবং সম্মেলনের দিন ব্যাপক লোকসমাগমন করে আমার মিছিলের সম্পূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছিল আব্বা।
অনেক সময়ই ব্যাক্তিগত কিংবা রাজনৈতিক নানা ব্যাস্ততায়, অস্থিরতায় নিজের খেয়ালও টিকটাক নিতে পারতামনা। নিজেকে নিজের থেকে হারিয়ে ফেললেও আব্বার চোখে টিকি আটকে যেতাম….কিরে তুই কি খাওয়া-দাওয়া টিকটাক করছিস না নাকি, শরীর-স্বাস্থের একি অবস্থা? যখন রাজনৈতিক কোন বিপদ-আপদ বা অস্থির পরিস্থিতি বা ঝুকিতে থাকতাম, আমার থেকেই উনি যেন বেশি টেনশনে থাকত, যতক্ষন বাহিরে থাকতাম প্রতিটি মুহুর্তেই আশের পাশের বন্ধু/সহকর্মীদের কাছ থেকে খুজ খবর নিত। প্রয়োজনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ছায়ার মত পাশে থাকত যেন আমার কোন ক্ষতি না হয়। সত্যিই আমার আব্বা আমার পৃতিবীতে দেখা শ্রেষ্ট একজন পিতা।
সভাপতি হওয়ার পর প্রত্যেক ঈদে যখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে ঈদ সালামী দিতে গিয়ে একবারে খালি হয়ে যেতাম বা অতিরিক্ত চাপে নিজেই যে কোন কিছু কিনতে ভুলে যেতাম। সবাই যখন নিজেদের কে নিয়ে ব্যাস্ত, ঐ সময় আব্বাই একমাত্র সেই ছোটবেলার মাসুম কে যেভাবে ঈদ সালামী দিত, সেই ভাবেই সালামি দিয়ে বলত যা অনেক হয়ছে এবার নিজের জন্য কিছু নিয়া আস। দাড়ি অনেক বড় হয়ে গেছে শেভ করে আসিস।
অথচ যোগ্য পিতার এই অযোগ্য সন্তান স্বার্থসিদ্ধ রাজনিতির নাট্য মঞ্চের স্বার্থান্বেষী পরিবারের অভিভাবক হয়ে নিঃস্বার্থ ভালবাসা বিলিয়ে দিতে সর্বদা মহাব্যাস্ত, মহাচিন্তিত। যেন নিজ পরিবার, বাবার কথা ভাবার সময় ই নেই। এমন অসংখ্যবার হয়েছে অাব্বার সামান্য প্রয়োজনে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে পাশে থাকতে পরিনি। কত কথার যে অবাধ্য হয়েছি, কত আদেশ/নির্দেশকে যে উপেক্ষা করেছি, কত অসংখ্যবার ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত ভুলে উনার মনে আঘাত দিয়েছি তারতু কোন হিসেব ই নেই। অথচ আমার দ্বারা বা আমার সামান্য কোন কাজে-কর্মে একটু তৃপ্ত হলেও সকল কষ্ঠ নিমিষেই ভুলে যেত।
জীবদ্দশায় উনাকে আর্থিক কিংবা লজিস্ট্রিক তেমন কোন সাপোর্ট ই দিতে পারিনি তবুও আমার মত এই অপদার্থ সন্তানকে নিয়ে যেন উনার গর্বের শেষ ছিলনা। আর তা পেছনে একমাত্র কারন ছিল সন্তানের প্রতি উনার নিস্বার্থ বিশাল ভালবাসা, মমতা।
অথচ এই মহাব্যাস্ত সন্তানের এই পর্যন্ত আসার পেছনে উনার যে কি পরিমান নিরঙ্কুশ সমর্থক, সহযোগীতা, আত্বত্যাগ, ভালবাসা ও দোয়া ছিল উনার মৃত্যুতে তা হারে হারে এখন উপলব্দি হচ্ছে।
===================================
সময়ের পরিক্রমায় বয়সের বৃদ্ধিতে আমার সেই ত্যাজপ্তি বাবা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ধীরেধীরে শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছিল। গত বছর অসুস্থতাজনিত কারনে প্রায়ই আব্বাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হত। সেই সুবাধে উনার শেষজীবদ্ধশায় কয়েকদিন নিয়মিত আব্বার সংস্পর্শেরর থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।
গত বছর (১৪-২৯ জুন ২০১৬) আব্বাকে নিয়ে হৃদরোগজনিত উন্নত চিকিৎসার জন্য চেন্নাই গিয়েছিলাম।
তখন একই রুমে থাকায় প্রায় দেখতাম আব্বাকে মাত্রাতিরিক্ত রোগযন্ত্রণায় সহ্য না করতে পেরে চিৎকার করে উঠত। চোখের সামনে উনার শারিরিক এই নিস্তেজতা ও নিরবতা যেন যেন মেনে নিতে পারতাম না। যে বাবা তার জীবন যৌবন অর্থ শ্রম সর্বস্ব ব্যায় করেছেন আমাদের সুখ, সফলতা ও উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য জন্য সেই বাবার একজন ক্ষমতাবান ছেলে হিসেবে উনার সেই অসহ্য কষ্ট-যন্ত্রণা চোখে দেখেও কিছু না করতে পেরে নিজেকে খুব অসহায় মনে হত।
আব্বার সংস্পর্শে কাটানো ঐ কয়েকটা দিনের কথা আমি কখনোই ভুলতে পারবনা।
প্রায় আচমকা কানে বাজে উনার শেষ কয়েকটা শব্দ, শারীরিক অসহ্য যন্ত্রনায় আব্বার সেই চিৎকার, চোখে বেশে উঠে নিস্তেজ দেহে শুয়ে থাকা উনার সেই মলীন চেহেরা। মৃত্যুপথযাত্রী হয়েও আমাদের জন্য উনার চিন্তা ভালবাসা দেখে মারাত্বকভাবে ব্যাতীত হতাম।
যে বাবা সবসময় দেখে এসেছি সিংহের ন্যায় ত্যাজদিপ্ত, যার কণ্ঠে ছিল বাঘের গর্জন, যার সামনে দাড়ালে হাত পা কাপত। যিনি জীবন সংগ্রামে নানা প্রতিকুলতা, প্রতিবন্ধকতার সাথে যুদ্ধ করে এসেছে অথচ সেই বাবাকে যখন দেখতাম নানান রুগেআক্রান্ত হয়ে দুর্বল, নিরব, নিস্তেজ হয়ে কেমন জানি অচেনা হয়ে যাচ্ছে। তখন বাবার এমন পরিস্থিতি সত্যিই মেনে নিতে পারতাম না…. চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হত —– বাবা আমি আবার আপনার সেই ছোট মাসুম হতে চাই ——কোন অন্যায়, ভুল করলে সুস্থ সবল সুঠাম দেহের অধিকারী আপনার সেই ত্যাজদিপ্ত কন্ঠে আবার ধমক কিংবা আপনার হাতে মার খেতে চাই।
বাবাবিহীন সত্যিই আজ আমি খুব অসহায়। কোথায় যেন কী নেই। আমার চারপাশ যেন অন্ধকার। পথ চলতে পারছি না। বাবার সাহচার্য-সহযোগিতার কাঙাল হয়ে উঠছি দিন দিন। জীবন সংগ্রামের আজ পরাজিত হয়ে যাচ্ছি। কেউ যেন আর আমার পাশে নেই। কেউ আর আব্বার মতো নিঃস্বার্থ ভালোবাসে না। সবার ভালোবাসার ভণিতার মাঝে যেন স্বার্থ কাজ করে। সবাই যেন ভালোবাসার অভিনয় করে বিনিময়ে কিছু নিতে চায়। কিন্তু একমাত্র আব্বাই ছিল যিনি মৃত্যুঅবদি আমাকে নিস্বার্থভাবে দিয়েই গেলেন।
হে খোদা, উনি যেমন ছোটবেলা আমাদের আদরে যত্নে লালন-পালন করেছেন ঠিক তেমনি পরপারে তুমি তাকে আদরে যত্নে ভালো রেখ।
সবার প্রতি অনুরোধ যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা প্রতি মুহূর্তে বাবা থাকার অনুভূতি নিয়ে সময়টাকে উপভোগ কর। বাবার জন্য সময় দাও, কথা বল, আদর কর, যত্ন নাও, সু’সন্তানের মতো সব দায়িত্ব পালন কর। প্রতি মুহূর্তে তটস্থ থেকো কখন না বাবা হারিয়ে যায়।