মোঃ আল মামুন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন পাপিয়া নামের আরো এক রোগী। আদালতে দায়ের করা মামলার তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আদালতের নির্দেশে জেলার সিভিল সার্জনের গঠিত তদন্ত কমিটি অভিযোগের তদন্ত করে ১২ জানুয়ারী আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। শুধু ভুল চিকিৎসা নয়, হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবৈধভাবে বিভিন্ন ডিগ্রী ব্যবহার করছেন বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। হাসপাতালটিতে সার্বক্ষনিক বিশেষষ্ণ চিকিৎসক এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থা না থাকার কথাও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এরআগে স্কুল শিক্ষিকা নওশীন আহমেদ দিয়াকে (২৯) ভুল চিকিৎসা ও ঔষধ প্রয়োগে মৃত্যু ঘটনার অভিযোগে হাসপাতালটির পরিচালক ডাক্তার ডিউক চৌধুরী ও তার হাসপাতালে কর্মরত দুই চিকিৎসক অরুনেস্বর পাল অভি ও মো: শাহাদাত হোসেন রাসেল ১ জানুয়ারী জেলে যান।
পাপিয়াকে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে তার পিতা আবুল খায়েরের মামলায় ডা. ডিউক চৌধুরী, হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এঞ্জেলা চৌধুরী, ডা. অরুনেশ্বর পাল ও ডা.তনুশ্রী রায়কে আসামী করা হয়। আদালতের নির্দেশে জেলার সিভিল সার্জন ৫ ডিসেম্বর ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাসুম ইফতেখারকে প্রধান করে অন্য সদস্যরা হচ্ছেন ডা. ফৌজিয়া আখতার, ডা. মোঃ মাহমুদুল হাছান, সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী মোঃ জাহিদুল হক। তদন্ত কমিটি ১৭ ডিসেম্বর তদন্ত কার্য্যক্রম সম্পন্ন করে। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, তদন্ত রিপোর্টে বলা হয় রোগীর (পাপিয়া) আলট্রাসনোগ্রামে সঠিক রিপোর্ট না আসার ফলে রোগীর রোগ নির্নয় সঠিকভাবে হয়নি এবং পরবর্তী জটিলতার সৃষ্টি হয়। এইরূপ জটিল ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ সনোলজিষ্ট দ্বারা দ্বিতীয়বার আলট্রাসনোগ্রাম করার পর চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিত ছিলো বলে একমত পোষন করেন
তদন্ত কমিটির সদস্যরা। রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৯ সালের ২মার্চ রোগীকে যখন খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে আনা হয় তখন রোগীকে ভর্তি করা হয়নি। ডিএন্ডসি অপারেশন নোটে ডাক্তার এমএ মজিদের নাম দেখা যায় কিন্তু তার কোন ব্যবস্থাপত্র পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র ডাক্তার অরুনেশ্বর পালের ব্যবস্থাপত্র দেখা যায়। তদন্ত প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এমন আধুনিক হাসপাতালে ইমার্জেন্সি অপারেশনের জন্যে সার্বক্ষনিক বিশেষষ্ণ চিকিৎসকসহ আনুসাঙ্গিক কোন ব্যবস্থা নেই। হাসপাতালের চিকিৎসকগন এমবিবিএস ডিগ্রীর পর যেসকল ডিগ্রী ব্যবহার করছেন তা বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল অনুসারে বৈধ নয়। এরআগে নবীনগরের জালশুকা গ্রামের মোঃ আবুল খায়ের তার মেয়ে পাপিয়ার ভুল চিকিৎসার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়, দেড় মাসের অন্তসত্বা অবস্থায় পাপিয়ার তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা হলে খ্রীষ্টিয়ান মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে কোন পরীক্ষা ছাড়াই হাসপাতালের চিকিৎসকরা পাপিয়ার ডিএনসি করার পরামর্শ দেন এবং ৫৮০০ টাকা ফি নেন। পাপিয়া ও তার স্বজনদের আপত্তির পরও ডিএনসি করেন তারা। কিন্তু ডিএনসি করার সময় তার জরায়ুর রক্তনালী কেটে ফেলা হয়। বাসায় নেয়ার পরপরই প্রচন্ড ব্যাথা ও রক্তপাত শুরু হয়। পুনরায় ওই হাসপাতালে নিয়ে আসলে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে দূর্ব্যবহার করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির পর পাপিয়ার জটিল অপারেশন করা হয়। ১২ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। জীবন বাচঁলেও স্বাভাবিক চলাফেরা করার সক্ষমতা হারিয়েছেন। সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহআলম জানান, পাপিয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা হলে আদালত এ বিষয়ে তাকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। এরপর তিনি ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেন। তদন্ত কমটির দেয়া রিপোর্ট ১২ জানুয়ারী আদালতে জমা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১লা জুন ভুল চিকিৎসায় পারভীন বেগম (২৮) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয় ডিউকের হাসপাতালে।